কাঠের তৈরি বেড়া ও খাট-পালঙ্ক বাংলাদেশের অতি প্রাচীন কারুশিল্প। কাঠের বেড়াতে সুন্দর কারুকাজ করে তাতে সিংহ, হাতির মুখ, পদ্ম ইত্যাদি মোটিফের ব্যবহার করা হতো। কাঠের বেড়া একদা ফরিদপুর অঞ্চলের একটি জনপ্রিয় শিল্প ছিল। দরজার তোরণের দুপাশে লতা-পাতা মাঝখানে থাকে দুটি সিংহ। সিংহদ্বারের ঐতিহ্য থেকে এ রীতির প্রবর্তন হয়েছে বলে অনুমান করা যায়। কাঠের বেড়ার মতো কাঠের পালঙ্কও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প। নানারকম কারুকার্যখচিত পালঙ্ক বা খাট বহু প্রাচীন কাল থেকে এদেশের ঘরে ঘরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অতীতে পালঙ্কের পায়া বাঘ-সিংহের থাবার মতো করে খোদাই করা হতো। কখনোবা তা পরির মতো করে খোদাই করা হতো। জাতীয় জাদুঘরে রক্ষিত দুটি পালঙ্কের পায়া, মশারির স্ট্যান্ড পরিরা যেন ধারণ করে আছে। তাছাড়া আছে লতাপাতার বিচিত্র অলঙ্করণ। গ্রাম অঞ্চলে সচরাচর একজোড়া ময়ূর দিয়ে খাট-পালঙ্কের মাথার দিকের কাঠ অলঙ্কৃত করা হয়।
প্রাচীনকাল থেকেই কাঠের তৈরি কারুকার্য খচিত দরজা আমাদের কারুশিল্পকে সমৃদ্ধ করেছে। ফুল-লতা-পাতার নকশা ছাড়াও সিংহ, হাতি প্রভৃতি প্রাণীর মুখ খোদাই করে দরজা অলঙ্কৃত করা হতো। সুরম্য ভবনের বিশাল আকৃতির কারুকার্য খচিত দরজা ভবনের সৌন্দর্য দ্বিগুণ করে দিত। এখনো সৌখিন বাঙালিরা তাদের বাসগৃহে কারুকার্যময় দরজার ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের রুচিবোধের পরিচয় দেয়।
বাংলাদেশের অসংখ্য কারুশিল্প থেকে উপরে মাত্র কয়েকটি নিয়ে আলোচনা হলো। আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা লোকশিল্প ও কারুশিল্প সম্পর্কে আমরা আরও সচেতন হলে এ সকল বিষয়ে আরও জানতে পারব। বাংলাদেশের এক এক অঞ্চলে এক এক লোকশিল্প ও কারুশিল্প শিল্পগুণের জন্য, নিপুণ কাজের জন্য ও সৌন্দর্যের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছে। তোমরা যখন যে কারুশিল্প বা লোকশিল্প হাতের কাছে পাবে সেটি সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে জেনে নেবে।
Read more